শরীরে জ্বালাপোড়া কেন হয় এবং এর প্রতিকার
শরীরে জ্বালাপোড়া কেন হয় জানেন? শরীরে জ্বালাপোড়া সচারচর কম বেশি মানুষের হয়ে থাকে। বিভিন্ন পেশা বা বিভিন্ন বয়সের মানুষের মধ্যে এ জাতীয় সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে। আজ আপনাদের সাথে শরীরে জ্বালাপোড়ার প্রতিকার বিস্তারিত আলোচনা করব,
পেজ সূচিপত্রঃ শরীরে জ্বালাপোড়া কেন হয় এবং এর প্রতিকার
- শরীরে জ্বালাপোড়া কেন হয়
- শরীরে জ্বালাপোড়ার চিকিৎসা কি হতে পারে
- কিভাবে ঘরোয়া উপায়ে শরীরে জ্বালাপোড়া কমানো যায়
- শরীরে জ্বালাপোড়া প্রতিরোধের উপায়
- শরীরে জ্বালাপোড়া নিয়ে লেখকের বক্তব্য
শরীরের জ্বালাপোড়া কেন হয়
শরীরে জ্বালাপোড়ার সমস্যাতে আমরা অনেকে ভুগে থাকি। শারীরিক কোন সমস্যা বা জীবনযাপনের অনিয়মের জন্য শরীরে জ্বালাপোড়া হয়ে থাকে। শরীরে জ্বালাপোড়া হওয়ার অনেক কারণ থাকতে পারে। তার মধ্যে উল্লেখ্য হলোঃ এসিডিটি, গাস্টাইটিস, ফুড এলার্জি, স্ট্রেস ও উদ্বেগ ইত্যাদি যা স্বাস্থ্যগত সমস্যা থেকে উদ্ভূত। চলুন আপনাদের সাথে বিস্তারিত আলোচনা করি এগুলো,
এসিডিটি
খাদ্যাভ্যাসের কারণে পাকস্থলীতে অতিরিক্ত এসিড উৎপন্ন হয়ে থাকে। যেমন বাসি খাবারের কারণে পাকস্থলীতে এসিড উৎপন্ন হয়ে তা গলা ও বুকের মধ্যে জ্বালাপোড়ার অনুভূতির সৃষ্টি করে থাকে। এটির কারণে অনেক সময় বুকেও ব্যথা অনুভূত হয়। এই এসিডিটির কারণে ব্যক্তির পাতলা পায়খানা ও হয়ে থাকে। পেট ফেটে যেতে পারে। সেই সঙ্গে বদহজমসহ পেট ফুলে যেতে পারে। মানুষ একটি অস্বস্তিকর অবস্থা থেকে হাসফাস শুরু করে।
গাস্টাইটিস
মানব শরীরের পাকস্থলীর দিল্লিতে ব্যাপক প্রদাহ হয়ে থাকে। এই ব্যাপক প্রদাহাকে গাস্টাইটিস নামে পরিচিত। যারা অতিরিক্ত মদ্যপান তামাকের ব্যবহার সিগারেট জনিত বা তারও বেশি ধূমপানের অভ্যাসে আসক্ত তারা সাধারণত এই ধরনের সমস্যাই ভুকে থাকে না। আবার অনেকে অনেক মহল্লা জাতীয় খাবারে অভ্যস্ত এবং শুকনা মরিচের ঝাল বেশি ব্যবহার করে থাকেন তারাও এই গ্যাসট্রাইটিস রোগে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকেন। আবার যারা দীর্ঘ সময়ই ব্যাপী অ্যান্টি ইমপ্লয়মেন্টরি ঔষধ এর ব্যবহার করে থাকলেও এ রোগের সৃষ্টি হয়ে থাকে।
ফুড এলার্জি
বিভিন্ন মানুষের শরীরে বিভিন্ন ধরনের এলার্জি আমাদের সমাজে লক্ষ্য করা যায়। কারো ধুলাবালিতে এলার্জি আবার কারো কারো খাদ্যাভাসে এলার্জি লক্ষ্য করা যায়। কারো এলার্জির কারণে শরীরের বিভিন্ন অংশ চুলকিয়ে থাকে। এতে করে শরীরের বিভিন্ন অংশ ফুলে যায়। এ সমস্ত কারণে শরীরে জ্বালাপোড়া সৃষ্টি হতে পারে। খাবারের ক্ষেত্রে এলার্জি থেকে জ্বালাপোড়া হতে পারে। এলার্জির প্রভাব শরীরের রোগ প্রতিরোধর ব্যবস্থা দ্বারা পরিচালিত হয়। বিধায় দেহে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক অস্বস্তি সৃষ্টি করে থাকে।
আপনার আরো যে যে পোষ্ট পছন্দ হতে পারেঃ
ইনফ্লুমেটরি বাওয়েল ডিজিজ
ক্রনিকাল ডিজিজ যা আমরা অবজ্ঞা ভরে প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসা না করে দিনের পরে দিন শরীরে রোগ পুষে রাখি। কুলাইটিসের মত জটিল হওয়ার কারণে অন্ত্রের প্রদাহ হয়ে থাকতে পারে। এই সমস্ত কারণে শরীরে জ্বালাপোড়া দিনের পরে দিন বাড়তে থাকে। এতে সে ব্যক্তি সার্বক্ষণিক অস্বস্তিতে ভুগতে পারে।
স্ট্রেস ও উদ্বেগ
আমরা সর্বদা বিভিন্ন পেশার মানুষ বিভিন্ন কর্মে লিপ্ত। বিভিন্ন মানুষের কাজের ধরন অনুযায়ী বিভিন্ন স্ট্রেস নিয়ে কাজ করে। কারো কারো কাজ এত বেশি যে সর্বদা মানসিক চাপে(যাহা বিভিন্ন স্ট্রেস ও উদ্বেগ) জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। এই সমস্ত স্ট্রেস ও উদ্বেগ নিয়ে কাজ করার কারণে চোখ ও মস্তিষ্ক সহ শরীরের জ্বালাপোড়া বিশেষভাবে লক্ষ্য করা যায়।
ঔষধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
আমাদের দেশে সাধারণত মানুষজন ফার্মেসী থেকে ঔষধ কিনে খেয়ে থাকেন। এটা কোন অবস্থায় কাম্য নয়। এটা একটা খারাপ অভ্যাস। সাধারণত কোন ঔষধ খাওয়ার আগে কোন গ্রাজুয়েট ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করে তার নির্দেশিকা মোতাবেক ঔষধ খাওয়া প্রয়োজন। নচেত ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়ে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তাই এগুলো বদ অভ্যাসের কারণে প্রাথমিক অবস্থায় শরীর ও হাত পা জ্বালাপোড়া করতে পারে।
শরীরে জ্বালাপোড়ার চিকিৎসা কি হতে পারে
শরীরে জ্বালাপোড়া একটি শারীরিক সমস্যা, যা মানুষের অস্বস্তির কারণ হয়ে দাড়াই। এর চিকিৎসা নির্ভর করে রোগের উপর। একেক রোগের চিকিৎসা আকেক রকম, তার চিকিৎসার পূর্বে শনাক্ত করে নেওয়া উচিত যে কন রোগের জন্য শরীরে জ্বালাপোড়া দেখা দিচ্ছে। শরীরে জ্বালাপোড়া উপশমের জন্য কিছু সাধারন চিকিৎসা যা মানলে আপনি উপকৃত হতে পারেন। সেগুলির বিবরণ নিম্নরূপ,
আমাদের এসিডিটি ও গ্যাস্টাইটিসের নিরাময়ের জন্য এন্টাসিড জাতীয় ঔষধ নিয়মিত সেবন করা প্রয়োজন। এসিডিটি কমানোর জন্য পচা বা বাসি খাবার পরিহার করতে হবে। প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। নিয়মিত টয়লেট ব্যবহার করতে হবে। এতে করে শরীরের জ্বালাপোড়া কমানো সহ সুস্থতা ফিরে আসবে।
ফুড এলার্জি চিকিৎসা
সচারচর দেখা যায় আপনার যেগুলি আচরণ বা চলাফেরা যা খাবার গ্রহণ সেদিকে আপনাকে নজর দিতে হবে। যে সমস্ত আচরণে এলার্জি বেড়ে যায় সে সকল কাজকর্ম থেকে দূরে থাকতে হবে। যেমন কারো ধুলাবালিতে এলার্জি আছে তাদের ধুলাবালি থেকে দূরে থাকতে হবে। আবার অনেকের যে খাদ্য খেলে অ্যালার্জি হয় সেসব খাদ্য থেকে দূরে থাকতে হবে। প্রয়োজনে অ্যান্টিহিস্টামিন ওষুধ ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক সেবন করতে পারেন।
স্ট্রেজ ও উদ্বেগের চিকিৎসা
মানসিক স্বস্তি একটি ভচ্ছলতার বিষয়। আপনি মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য দৈহিক ব্যায়াম কোন চিত্র বিনোদন যোগব্যায়াম মেডিটেশন থেরাপি ব্যবহার করতে পারেন। যদি মনে করেন আপনার প্রয়োজনে সাইকোফার্মাকোলজিক্যাল চিকিৎসাও নিয়ে শরীর সুস্থ রাখতে পারেন।
কিভাবে ঘরোয়া উপায়ে শরীরে জ্বালাপোড়া কমানো যায়
জ্বালাপোড়া কমানোর জন্য ঘরোয়া কিছু টোটকা কাজে লাগানো যেতে পারে। এই ঘরোয়া উপায়গুলো শরীরের প্রাথমিকভাবে আরাম দিতে এবং জ্বালাপোড়া কমাতে সাহায্য করে। আমরা ঘরোয়া উপায়ে যেসব টোটকা ব্যবহার করে থাকি সেগুলো সহজে পাওয়া যায় এবং এগুলো ব্যাবহার করা নিরাপদও বটে। তাই ঘরোয়া উপায়ে আপনার শরীরে জ্বালাপোড়া যেভাবে কমাবেন তা নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো,
আদা ও মধু সেবন
আদাও মধু হারবাল জাতীয় চিকিৎসা। আদা প্রাকৃতিক উপায়ে খেতা করে এক চা চামচ রস তার সাথে এক চা চামচ মধু মিশিয়ে সেবন করলে শরীরের জ্বালাপোড়া সহ হাত পায়ের জ্বালাপোড়া থেকে প্রশান্তি পাওয়া যায়।
পানীয় জল ও বিশ্রাম
অধিক পরিমাণে জল পান করতে হবে। প্রচুর পরিমাণে জল শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করে। সারাদিন কাজের পরে প্রয়োজনীয় বিশ্রাম নিতে হবে। এতে করে শরীর ও হাত পায়ের জ্বালা দূর করা সম্ভব। নিয়ম তান্ত্রিক জীবন যাপন করলে শরীর ভালো থাকবে।
উষ্ণ পানি দিয়ে গোসল
উষ্ণ পানি শরীরের জন্য খুবই উপকারী। উষ্ণ পানি শরীরের মাংসপেশিকে শিথিল করে। শরীরের মাংসপেশির সঙ্গে সঙ্গে শরীর ও হাত পা এর জ্বালা দূর করতে সহায়তা করে।
কিসমিস খান
কিসমিস পেটের জ্বালাপোড়া নিবারণে খুবই কার্যকরী। শরীরে প্রয়োজনীয় গ্লুকোজ সরবরাহ করে। যাদের হজমের সমস্যা আছে তাদের পরিপাকতন্ত্রের সুবিধা সহ হজমে সহজ করে এবং পেটের আগাম সহ শরীরের হাত পা জ্বালা থেকে নিরাময় দেয়।
মেন্থল ও পিপারমেন্ট এর ব্যবহার
চায়ের সঙ্গে মেন্থল থাকে। এর সঙ্গে পিপারমেন্ট মিশিয়ে ব্যবহার করা যায়। কারো যদি পাকস্থলীর সমস্যা থাকে তা অস্বস্তি কমাতে সহায়তা করে। মেন্থল শরীরে হজমের সহায়তা করে শরীর সুস্থ ও স্বস্তির প্রধান সহ হাত-পা জ্বালাপোড়া থেকে রক্ষা করে থাকে।
শরীরে জ্বালাপোড়া প্রতিরোধের উপায়
শরীরে জ্বালাপোড়া কেন হয় তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা উপরে করে এসেছি। এই সমস্যা গুলো যাতে আপনার না হয় সেদিকে সচেতন থাকা উচিত। আমরা সাধারণত কিছু নিয়ম-কানুন মেনে চললে শরীরের জ্বালাপোড়া সহ হাত পায়ের জ্বালাপোড়া ও শরীর ভালো রাখা যায়। চলুন তাহলে আপনাদের সাথে বিস্তারিত আলোচনা করি কিভাবে শরীরে জ্বালাপোড়া প্রতিরোধ করা যায়,
খাদ্যাভাস
খাদ্যাভ্যাসের কারণে আমাদের শরীর ভালো অথবা খারাপ হয়ে যায়। অধিক মসলাযুক্ত খাবার পরিহার করে আঁশযুক্ত খাবার যেমন শাকসবজি ফলমূল ও শস্যজাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে। রেডমিট ট্যাগ করে মুরগির মাংস ও ছোট মাছের মত খাবার খেতে হবে।
ধূমপান ও অন্যান্য তামাকজাতীয় খাবার থেকে নিজেকে হেফাজতে রাখতে হবে। অতিরিক্ত তামাক ও মদ্যপান আপনার পাকস্থলী প্রদাহ ও অন্যান্য শারীরিক সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এতে করে শরীর ও হাত-পা জ্বালাপোড়া থেকে রক্ষা পাবেন।
মানসিক চাপ কমানো
নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম মেডিটেশন ও পর্যাপ্ত ঘুম যোগ ব্যায়াম করলে আপনার মানসিক চাপ কমানো সম্ভব। এই ব্যায়াম নিয়মিত করলে আপনার মানসিক অস্বস্তি কমে যেতে পারে।
নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা
শরীরে কোন সমস্যা দেখা দিলে প্রাথমিক পর্যায়ে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। নিয়মিত স্বার্থপর পরীক্ষা করলে আপনার শরীর ভালো থাকবে। এতে করে আপনার মন মানসিকতার উন্নতি হবে।
শরীরের জ্বালাপোড়া নিয়ে শেষ কথা
শরীরের বা হাত পায়ের জ্বালাপোড়া অনেকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখে থাকেন না। এটা কখনো কখনো বড় ধরনের সমস্যা হিসেবে দেখা দিতে পারে। আমি মনে করি পরিমিত খাদ্যাভ্যাস নিজের সচেতনতা ও মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া আমাদের প্রত্যেকেরই নজর দিতে হবে। অনেক সময় অবহেলার কারণে বড় ধরনের বিপদ ডেকে আনতে পারে।
শরীরকে ঠিক রাখতে হলে যোগব্যায়াম শারীরিক ব্যায়াম ও খাদ্যাভ্যাস ঠিক রাখতে হবে। কি অভ্যাস গুলি মেনে চললে আপনার হাত-পা সহ শরীরের জ্বালাপোড়া থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারবেন। এই আর্টিকেল আমরা বিস্তারিত আলোচনা করেছি যে শরীরের জ্বালাপোড়ার কারণ, এর চিকিৎসা এবং প্রতিরোধের উপায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনার উপকারে আসবে।
পেন এন্ড পেপার আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url