কলা খাওয়ার ১৭টি কার্যকরী উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম
স্বাস্থ্য ও পুষ্টি চান প্রত্যহ কলা খান। কলা পৃথিবীতে একটি জনপ্রিয় ফল যা পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ। এবং সমৃদ্ধিতে খাদ্য তালিকায় অন্যতম স্থান দখল করে আছে। এই ফলটি পুষ্টি চাহিদার দিক থেকে অন্যান্য অবস্থানে রহিয়াছে।
পেজ সূচিপত্রঃ কলা খাওয়ার ১৭টি কার্যকরী উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম
কলা খাওয়ার উপকারিতা
কলা খাওয়ার নিয়ম জানার পূর্বে আমাদের কলা খাওয়ার উপকারিতা জেনে নেওয়া উচিত। আমরা ছোট থেকেই জেনে এসেছি যে কলা অনেক পুষ্টিকর একটি ফল। কিন্তু আপনারা কি জানেন এই পুষ্টিকর ফলটি খেলে আমাদের শরীরে কি কি উপকার হতে পারে? চলেন তবে আপনাদের জানিয়ে দেই কলা খাওয়ার উপকারিতা আসলে কি,
১. পুষ্টিগুণে ভরপুরঃ
একটি মাঝারি ধরনের পাকা কলাতে প্রচুর পুষ্টিগুণ থেকে থাকে। পাকা কলার পুষ্টিগুণ হিসাবে এটি আছে ১০৫ গ্রাম ক্যালোরি।ঔ একটি পরিপূর্ণ মানুষের জন্য প্রতিদিন ৩২০০ ক্যালোরি প্রয়োজন পড়ে। একটি পাকা কলা থেকে প্রতিদিন ১০৫ গ্রাম ক্যালোরি পূর্ণতা লাভ করে। তাছাড়া ৩ গ্রাম ফাইবার যা ডায়বেটিস রোগীদের জন্য প্রয়োজন পড়ে। এতে আছে এক গ্রাম রুটিন এবং ১৫ গ্রাম সমপরিমাণ গ্লুকোজ পাওয়া যায়। তাছাড়া এর চেয়ে আছে ভিটামিন সি, ভিটামিন বি ৬, ও পটাশিয়াম ভরপুর। যা শরীর গঠনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
২. হৃদ রোগের ঝুঁকি কমায়ঃ
পাকা কলাতে যথেষ্ট পরিমাণ পটাশিয়াম এর উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। পটাশিয়াম হৃদ রোগের ঝুঁকি কমিয়ে থাকে। যে সকল ব্যক্তি উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন তারা হৃদরোগের ঝুঁকিতে থাকে। এতে করে তারা যেকোনো সময়ে স্টোকের সম্ভাবনা থেকে থাকে। নিয়মিত পাকা কলা খেলে তাদের উচ্চ রক্তচাপের প্রবণতা কমতে থাকে। এতে করে তাদের স্টোক হওয়ার সম্ভাবনা কমে আসে।
৩. হজম শক্তি বৃদ্ধি করেঃ
পাকা কলাতে হজম শক্তি বৃদ্ধি করে থাকে। নিয়মিত পাকা কলা খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। পাকা কলাতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে। ফাইবারের কারণে পরিপাকতন্ত্রের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে থাকে। আপনি যদি প্রতিদিন নিয়মিত ভাবে পাকা কলা খেয়ে থাকেন তবে আপনার হজম শক্তি সহ পেটের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে যে কোন পেটের সমস্যা দূর হবে।
৪. শরীরে শক্তি বৃদ্ধি করেঃ
পাকা কলা শরীরে তাৎক্ষণিক শক্তি বৃদ্ধি করে থাকে। পাকা কলাতে সুগার জাতীয় উপাদান সহ কার্বোহাইড্রেট ভরপুর থাকে। ব্যায়াম করার আগে অথবা পরে পাকা কলা খেলে তাৎক্ষণিক শরীরে এনার্জি পাওয়া যায়। তবে আমরা বলে থাকি ব্যায়াম করার পরে আপনি পাকা কলা খেতে পারেন। এতে করে যে পরিমাণ এনার্জি অথবা ক্যালরি ক্ষয় হয়েছে তা তাৎক্ষনিক ভবে ফিরে পেতে কলা খান শরীর সুস্থ রাখুন।
৫. মেজাজ ভালো রাখেঃ
পাকা কলাতে ট্রিপ টোফেন নামক একটি উপাদান থেকে থাকে। এই উপাদান মস্তিষ্কে সেরো টনিন হরমোনের উৎপত্তি ঘটিয়ে থাকে। এই সেরোটনিল হরমোন এর দ্বারা মেজাজ, মানসিক বিষণ্নতা দূর করতে সাহায্য করে। প্রতিটি পাকা কলা তে আছে ২৮ মিলিগ্রাম সমপরিমাণ ম্যাগনেসিয়াম। এই ম্যাগনেসিয়াম মন মেজাজ ভালো রাখতে সাহায্য করে। নিয়মিত কলা খেলে মানুষের স্বাচ্ছন্দে ঘুম ও ভালো হয়ে থাকে।
ওজন কমাতে পাকা কলার বিকল্প নাই। পাকা কলাতে ক্যালরি কম থাকে অপরদিকে ফাইবার বেশি থাকে। কলা নিয়মিত খেলে পেট ভরে থাকে যার পরনাই খুদা কম লাগে। ক্ষুধা কম লাগার কারণে শরীরে ফ্যাট গলতে সাহায্য করে। আদর্শ খাবারের দিকে বিবেচনা করলে কলা কে একটি আদর্শ খাবার হিসাবে আমাদের খাদ্য তালিকায় রাখলে শরীর ও মন ভালো থাকার সঙ্গে সঙ্গে শরীরের ওজনও কমাতে তার জুড়ি নাই।
কলা খেলে যেমন শরীরের নানাবিধ উপকার হয়ে থাকে অপরদিকে পাকা কলা তকেও মুখে মাখন হিসাবে ব্যবহার করলেও উপকৃত হবেন। ত্বকের মসৃণতা ও ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে সাহায্য করে। পাকা কলাতে ভিটামিন সি এবং এন্টি অক্সিডেন্ট ভরপুর। সেজন্য ত্বকের যৌলুস ও উজ্জ্বলতা বাড়াতে সাহায্য করে। পাকা কলাকে একটি মন্থন করে নিন। প্রয়োজনীয় পরিমাণ মন্থন করা কলা নিয়ে প্যাকের মতো করে প্রতিদিন মুখে ও শরীরে ব্যবহার করলে মুখ ও শরীরের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পেতে থাকে।
৮. কিডনি সুস্থ রাখেঃ
পাকা কলাতে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম থাকে। প্রতিদিন নিয়মিত কলা খেলে কিডনিকে সুস্থ রেখে তার কার্যক্ষমতা কে শক্তিশালী করে তোলে। পটাশিয়ামের কারণে কিডনির কার্যকারিতা ও কিডনির স্বাস্থ্য ভালো রাখে। এতে করে কিডনি রোগের ঝুঁকি কমিয়ে থাকে। নিয়মিত কলা যেমন শরীর ভালো রাখে অপরদিকে কিডনির সুস্থতা ও বৃদ্ধি পায়।
৯. রক্তস্বল্পতা দূর করেঃ
পাকা কলাতে ভিটামিন বি ৬ থাকে। গ্লুকোজ মেটা বলিজমের প্রক্রিয়াকে সমুন্নত রাখে। কলাতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে। আয়রন শরীরে রক্তস্বল্পতা দূর করে। আইরন রক্তে হিমোগ্লোবিন উৎপাদন বাড়াই যা শরীরে রক্ত উৎপাদনে সহায়তা করে। শরীরে রক্তস্বল্পতা কমে গেলে তাকে আমরা অ্যানিমিয়া হিসেবে চিহ্নিত করে থাকি। অ্যানিমিয়া হলে শরীরে ক্লান্তি ও শ্বাসকষ্ট হতে পারে। কলাতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে। আইরন শরীরে রক্তে লোহিত কণিকা বৃদ্ধি করে থাকে। প্রেগনেন্ট মাদের অ্যানিমিয়া বেশি হয়ে থাকে। তাই প্রেগনেন্সি মাদের পরিমিত পরিমাণ পাকা কলা খাওয়ালে অ্যানিমিয়া থেকে দূরে রাখা যায়।
১০. স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সহায়তা করেঃ
পাকা কলাতে ভিটামিন বি ৬ এবং ম্যাগনেসিয়াম প্রচুর পরিমাণে বিদ্যমান থাকে। স্মৃতি শক্তি ধরে রাখার জন্য পরিমিত পরিমাণ কলা খান। ছাত্র জীবনে কলা খেলে তার মস্তিষ্কে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পেতে থাকবে। তাছাড়া সুস্থ শরীরে কলা খেলে আপনার স্মরণশক্তি প্রচুর পরিমাণে বৃদ্ধি পেতে থাকবে। মেধা শক্তি বাড়ানোর জন্য আপনি নিয়মিত কলা খেতে পারেন। এতে আপনার শরীর ও মন মানসিকতা ঠিক থাকবে।
১১. মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করেঃ
পাকা কলাতে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম ও ভিটামিন বি ৬ থেকে থাকে। ভিটামিন বি ৬ ও পটাশিয়াম মানুষের মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে থাকে। মানুষ সারাদিন পরিশ্রমের পর যদি নিয়মিত কলা খেয়ে থাকেন তবে মানসিক চাপ যথেষ্ট পরিমাণ কমে যায়। কলা খেলে শরীর সতেজতা ফিরে পেয়ে নতুন উদ্যমে কাজ করে যেতে পারেন।
আপনার আরো যে যে পোষ্ট পছন্দ হতে পারেঃ
১২. চুলের যত্নে কলাঃ
পাকা কলাতে ভিটামিন বি ৬ পটাশিয়ামের কারণে তার যথেষ্ট ঔষধি গুন রহিয়াছে। পাকা কলা পেস্ট করে সপ্তাহে অন্তত দুই দিন মাথা সহ চুলে ব্যবহার করলে চুলের যত্ন ও সৌন্দর্য বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। সঙ্গে সঙ্গে চুলের গোড়াও শক্ত হয়ে চুল পড়া বন্ধ হয়ে যায়। চুলের স্বাস্থ্য রক্ষায় পাকা কলার পেস্ট যথেষ্ট উপযোগী হিসাবে কাজ করে। আমাদের দেশে মেয়েরা পাকা কলা মাথায় ব্যবহার করে তারা তাদের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে থাকে।
১৩. ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়কঃ
পাকা কলাই থাকে বিভিন্ন এন্টি অক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন বি ৬। যা একজন মানুষের শরীরে আপনা আপনি রেডিক্যাল দূর করতে সাহায্য করে থাকে। কলা ক্যান্সার সৃষ্টির কোষ গুলোকে ধ্বংস করে দেয়। কলাতে ভিটামিন সি ও থেকে থাকে। ভিটামিন সি ও লাভোনয়েড ক্যান্সার প্রতিরোধে ভীষণভাবে কার্যকরী। প্রতিদিন একজন ব্যক্তি নিয়মিত কলা খেলে ক্যান্সারের মতো ভয়ান ক রোগ থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
১৪. হাড় গঠনে শক্তি বাড়ায়ঃ
পাকা কলা খেলে হাড় গঠনে সহায়ক হিসাবে কাজ করে। কলাতে ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে। এটি হাড় গঠনে ভূমিকা পালন করে। নিয়মিত কলা খেলে হাড় মজবুত করে। এতে করে অস্ট্রিওপ্রেরোসিসের ঝুঁকি থেকে রক্ষা করে।
১৫. ভিটামিনের ঘাটতি পূরণ করেঃ
পাকা কলা নিয়মিত খেলে শরীরের ভিটামিনের ঘাটতি পূরণ করে থাকে। প্রতিদিন একটি করে কলা খেলে আমাদের শরীরে ভিটামিন বি ৬ এর চাহিদা পূরণ করে থাকে। শরীরের সুস্থ কোষগুলিকে সজীব রেখে ক্ষতিকর কোষগুলোকে ধ্বংস করে থাকে। শরীরের অত্যাবশ্যকীয় কোষ তৈরিতে প্রয়োজনীয় ইনসুলিন, হিমোগ্লোবিন, এবং এমিনো এসিড যৌগ গঠনে কলা প্রয়োজনীয় ভূমিকা পালন করে। এজন্য এটিকে আদর্শ খাবার হিসাবে চিহ্নিত করে থাকে। দৈনন্দিন ভিটামিন বি ৬ এর ১৫% কলা পুষ্টিগুণ পূরণ করে থাকে।
১৬. পেশী গঠনে সহায়তা করেঃ
কলা একটি সহজলভ্য খাবার হিসেবে কাজ করে। যেখানে সেখানে প্রাত্যহিক খাদ্যতালিকা হিসেবে এর ব্যবহার ব্যাপক কথা অনেক বেশি। কলাতে পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন বি ৬, ও আয়রন সমৃদ্ধ। বেশি গঠনে কলা বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। যারা নিয়মিত ব্যায়াম করে থাকেন তারা ব্যায়াম করার পরে কলা খেলে তার পেশী শক্তি বৃদ্ধি পায় প্রতিদিন কলা খান বেশি গঠনে কাজে লাগান।
১৭. ডায়রিয়া থেকে উপশমঃ
ডায়রিয়া হলে কলা খেলে উপশম পাওয়া যায়। কলাতে আছে বিশেষ গুণ সম্পূর্ণ প্রতিরোধী স্টার্চ বা পরিপাকতন্ত্রের প্রক্রিয়াকে সচল রেখে বৃহদন্তে গিয়ে তা স্বাস্থ্যকর ব্যাকটেরিয়াকে খাদ্য হিসাবে পরিণত করতে পারে। মানুষের যখন ডায়রিয়া হয় তখন শরীর থেকে অপক্ষয়িত খনিজ পদার্থ পূরণে কলা কার্যকরী তথ্য হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
কলা কখন খাবেন
কলা একটি স্বাস্থ্য গুণ সমৃদ্ধ ফল বটে। তবে কলা কখন খাবেন তা নিয়ে অনেকে অনেক মত প্রকাশ করেছেন। বিশেষজ্ঞগণ অনেকে বলেছেন সকালে কলা খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। জলখাবারের সঙ্গে কলা খাওয়া ভালো। তবে অনেকে অনেকে মন্তব্য প্রকাশ করেছেন যে কোন সময় কলা খাওয়া যায়। অনেক বিশেষজ্ঞগণ রাত্রিতে কলা খেতে না করেছেন।
কলা খাওয়া নিয়ে আমাদের শেষ কথা
পাকা কলার স্বাস্থ্য গুণ এত বেশি যে আমাদের খাদ্য তালিকায় প্রতিদিন একটি করে কলা খাওয়ার কথা বিশেষজ্ঞগণ তথ্য প্রদান করেছেন। এটির শুধুমাত্র পুষ্টিগুণ নয় এতে রয়েছে অসাধারণ স্বাস্থ্য উপকারিতা। পাকা কলাতে পটাশিয়াম, ভিটামিন বি ৬ সহ অসাধারণ কার্যক্ষমতা যা পরিপাকতন্ত্রের ক্রিয়া সহ কিডনি, উচ্চ রক্তচাপ সহ শরীরের প্রয়োজনীয় ক্রিয়াকে সহায়তা করে। আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে প্রতিদিন একটি করে কলা খান শরীরকে সুস্থ রাখুন।
পেন এন্ড পেপার আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url