তেলাকুচা পাতার হাজারও গুণ - তেলাকুচা পাতার উপকারিতা

তেলাকুচা পাতার হাজারও গুণ ও তেলাকুচা পাতার উপকারিতা সম্পর্কে অনেকেরই অনেক তথ্য জানা নাই। আজ আমরা এই আর্টিকেলে এই সম্পর্কে আলোচনা করবো যাতে আপনারা এই আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হতে পারেন। 

তেলাকুচা পাতার হাজারও গুণ - তেলাকুচা পাতার উপকারিতা
তেলাকুচা পাতা বাংলাদেশে এক ঔষধি গুল্ম জাতীয় তৃণলতা উদ্ভিদের মধ্যে অন্যতম। তেলাকুচার পাতার বিশেষ গুনাগুন সম্বন্ধে এই আলোচনায়  তেলাকুচাপাতার ও তেলাকুচা গাছের উপকারিতা সম্পর্কে জানাবো। 

আলোচ্য সূচিঃ

তেলাকুচা পাতার হাজারও গুণ ও তেলাকুচা পাতার উপকারিতা

তেলাকুচা পাতা বাংলাদেশে এক ঔষধি গুল্ম জাতীয় তৃণলতা উদ্ভিদের মধ্যে অন্যতম। আমাদের দেশে গ্রাম বাংলায় আনাচে-কানাচে ঝোপে ঝাড়ে বাড়ির আশেপাশে তেলাকুচাপাতা প্রাকৃতিকভাবে গজিয়ে ওঠে। তেলাকুচা পাতায় যেমন উপকার রয়েছে তেমনি এর ফল মূল ভেষজ ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আমাদের দেশে অনেক অঞ্চলে তেলাকুচার পাতা শাকসবজি হিসেবেও ব্যবহার করে থাকে। সাধারণত আমাদের অনেকের বাড়ির আঙিনায় বা বাড়ির আশেপাশে অনেক ভেষজ উদ্ভিদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। অপরদিকে তেমনি ঔষধি গুন সমৃদ্ধ তেলাকুচার পাতা তার মধ্যে অন্যতম। প্রাচীন কাল থেকে এই উপমহাদেশে হাকীমগন এই বনজী ও গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদকে চিকিৎসা কাজ ব্যবহার করে তাদের চিকিৎসা ও কবিরাজী কাজে সাফল্য অর্জন করে আসছে।

তেলাকুচার পাতায় জন্ডিস ভালো করে 

বাংলাদেশের সূর্যের তাপে মানুষের জীবন ওষ্টাগত। সূর্যের তাপের কারণে বেশিরভাগ মানুষ পানি স্বল্পতায় ভুগে থাকে।এই পানি স্বল্পতার কারণে মানুষ জন্ডিস জাতীয় রোগে ভুগে আসছে। জন্ডিস থেকে রক্ষা পেতে তেলাকুচা পাতা তুলে তা পরিস্কার পানিতে ধুয়ে নিন তারপর তা পাটায় থেঁতা করে তা থেকে রস বের করে সকালে ও বিকালে খাওয়ালে জন্ডিস কমে যায়।

আরো পড়ুনঃ বাসক গাছের ঔষধি গুণ সম্পর্কে জেনে নিন

তেলাকুচার পাতা হাত পা জ্বালা পোড়া বন্ধ করে 

আমাদের অনেকের হাত-পা জ্বালাপোড়া করে থাকে। হাত-পা জ্বালাপোড়া হলে তালাকুচা পাতা তুলে তা পরিস্কার পানিতে ধুয়ে নিন তারপর তা পাটায় থেতাকরে তা  থেকে রস বের করে তার সাথে চুন মিশিয়ে হাতে-পায়ে মালিশ করলে হাত ও পায়ের জ্বালা কমে যায় ।

তেলাকুচার পাতা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে 

আমাদের দেশে অনেক মানুষ ডায়াবেটিকস রোগে আক্রান্ত হয়ে জীবন যাপন করছে ।ডায়াবেটিস রোগীরা তেলাকচার গাছের মূল সহ ছেচে সকালে হাফ কাপ ও বিকালে হাফ কাপ করে খাওয়ালে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ থাকে। আবার কেউ কেউ অন্যান্য শাকের সাথে তেলাকুচাপাতা মিশিয়ে ভাজি করে খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।

তেলাকুচার পাতা শ্বাসকষ্ট দূর করে 

আমাদের দেশে ঠান্ডা জনিত কারণে অনেকেরই শ্বাসকষ্ট হয়ে থাকে। এই শ্বাসকষ্ট থেকে রক্ষা পেতে তেলাকুচার পাতার জুড়ি নেই। তেলাকুচার কয়েকটি পাতা নিয়ে পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে তা থেকে রস বের করে তা গরম করে ৩-৪ বার সেবন করলে শ্বাসকষ্ট অনেকটা কমে যায়। 

তেলাকুচার পাতা ব্রন কমাতে সাহায্য করে 

আমাদের দেশে অনেক যুবক-যুবতী ও পরিণত বয়সে মানুষের মুখে ব্রণ দেখা যায়। ব্রন দূর করতে হলে তেলাকুচার পাতা ছেচে মুখে মাখলে তা পরবর্তীতে মুখ ধুয়ে ফেলে ব্রন থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। এভাবে সকাল বিকাল করলে মুখে ব্রন উঠা রোদ করে এবং ব্রন উঠে থাকলে তা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

তেলাকুচা পাতার হাজারও গুণ - তেলাকুচা পাতার উপকারিতা


আরো পড়ুনঃ ভেষজ উদ্ভিদের মধ্যে উলটকম্বল উদ্ভিদের অনেক গুণ জেনে নিন

তেলাকুচার পাতা এলার্জি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়

আমাদের সকলেরই বিভিন্ন ধরনের এলার্জি আছে। কারো পরিবেশের উপর এলার্জি আবার কারো খাবারের উপর এলার্জি লক্ষ্য করা যায়। যে জাতীয় এলার্জি মানুষ থাকুক না কেন এলার্জি কমাতে তেলাকুচার কয়েকটি পাতা তুলে তা পরিষ্কারভাবে ধুয়ে নিন তারপর পাতাগুলোকে পাটায় ছেচে তা থেকে রস বের করে নিন। বের করা রসের সঙ্গে সামান্য হলুদ ও প্রয়োজনীয় মধু মিশিয়ে তা প্রতিদিন সকালে ও বিকালে   সেবন করলে এলার্জি থেকে রক্ষা পাবেন। 

8তেলাকুচার পাতা থেকে স্তন্য দুধের স্বল্পতা বাড়ায় 

আমরা যারা সন্তান প্রসবের পর তাদের অনেকেরই স্তনের দুধে স্বল্পতা দেখা দিয়ে থাকে। সন্তান পর্যাপ্ত দুধ না পাবার কারণে বাজার থকে দুধে কিনে খাওয়াতে হয়। যদি মায়েদের দুধের স্বল্পতা দেখা দিলে তেলাকুচার ফল  পাটায় বেঁটে তা থেকে রস সংগ্রহ করে তার সাথে মধু মিশিয়ে সন্তান প্রসব করা মাকে খাওয়ালে পর্যাপ্ত দুধের স্বল্পতা নিশ্চিত হয়। সেই সঙ্গে বাচ্চা ও দুধ পেয়ে থাকে। 

তেলাকুচার পাতা ফাঙ্গাস ও দাদ দূর করে 

ফাঙ্গাস ও দাদ একটি সংক্রমণ জাতীয় চর্মরোগ যা একজন ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তির মধ্যে সংক্রমিত হয়ে থাকে। এ জাতীয় চর্মরোগ থেকে রক্ষা পেতে এ পাতার ব্যবহার প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে চলে আসছে। কারো শরীরে ফাঙ্গাস বা দাদ জাতীয় রোগ দেখা দিলে কয়েকটি তেলাকুচার পাতা ও কিছু নিমপাতা একসঙ্গে দিনে তিন থেকে চারবার করে লাগিয়ে দিলে ফাঙ্গাস ও দাদ জাতীয় সংক্রমণ রোগ ভালো হয়ে যায়।

তেলাকুচার পাতা খাবারের রুচি ফিরিয়ে আনে 

আমাদের অনেকেই বিভিন্ন কারণে মুখে রুচি নষ্ট হয়ে যাই হতে পারে জ্বরের কারণে হতে পারে খাদ্যাভাসের কারণে আবার বিভিন্ন অরুচিদ্রব্য খাওয়ার মাধ্যমে খাবারের রুচি ফিরিয়ে আনার জন্য তেলাকুচার পাতা হালকা সিদ্ধ করে তাতে পানি ঝরিয়ে তেলে ভেজে গরম ভাতের সঙ্গে খেলে মুখে রুচি ফিরে আসে। এটা হারবাল জাতীয় ঔষধ যা গ্রামবাংলায় সমাধিক প্রতিষ্ঠিত ।

তেলকুচার পাতা আমাশয় ভালো করে 

আমাদের মধ্যে যাদের দীর্ঘদিন আমাশয় নিয়ে অসুস্থ অবস্থায় দিন যাপন করে আসছেন। তারা তেলাকুচার পাতা ও কাণ্ড সহ পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে নিবেন। তারপর ডাল ও পাতা পাতায় ছেঁচে নিবেন। প্রতিদিন দুই থেকে তিন চা চামচ করে সকালে ও রাত্রিতে পর্যায়ক্রমে সাত দিন সেবন করবেন এতে করে দীর্ঘদিনের আমশয় থেকে মুক্তি পেতে পারেন। 

তেলাকুচার পাতা হাত-পা ফোলা বন্ধ করে

আমাদের অনেকেরই গাড়িতে জার্নি করলে বা দীর্ঘসময় নিচে বসে বসে কাজ করলে বা পা ঝুলিয়ে রাখলে পা হাত ফুলে যায়। এই ফুলে যাওয়াকে শোথ রোগ বলা হয়ে থাকে। এই শোথ রোগ থেকে মুক্তি পেতে তেলাকুচাপাতা ও তার ডাল সংগ্রহ করে পরিষ্কার পানি ধুয়ে তা পাটাতে থেতে রস বের করে  হাতে ও পায়ে মালিশ করলে এ রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। 

তেলাকুচা পাতার হাজারও গুণ - তেলাকুচা পাতার উপকারিতা

তেলাকুচার পাতার অপকারিতা 

তেলাকুচা পাতা একটি লতানো উদ্ভিদ হলেও ঠিক নির্দিষ্ট ফল হয়ে থাকে। এ ফল দেখতে অনেকটা লালচে রঙের হয়ে থাকে। সেই ফল থেকে আবার নতুন গাছ জন্মে এই ফল থেকে কি জাতীয় রোগ নিরাময় হয় তা বিজ্ঞানীগণ এখনো আবিষ্কৃত করতে পারিনি তবে অদূর ভবিষ্যতে গবেষণার মাধ্যমে এ জাতীয় ঔষধের গুনাগুন বের করা সম্ভব হবে। বর্তমানে জাতীয় ভাবে হারবাল চিকিৎসায় এহ জাতীয় বনৌজী  গুল্ম জাতীয় ও লতানো উদ্ভিদ নিয়ে ব্যাপক গবেষনা চালিয়ে আসছে।এক কথায় বলতে পারি হারবাল চিকিৎসায় মানুষের আস্থা অনেকাংশে ফিরে এসেছে।

আমাদের শেষ কথা 

তেলাকুচা গাছ আমাদের সকলের কাছে একটি পরিচিত নাম। যা বাংলাদেশের গ্রাম্য এলাকায় আনাচে-কানাচে দেখতে পাওয়া যায়। এটি একটি লতানো ঔষধি গাছ। এই গাছটি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী হিসেবে পরিচিত। তেলাকুচা পাতাতে প্রচুর পরিমাণে বিটা ক্যারেটিং নামক ঔষধি গুনা গুন রহিয়াছে।  যা আমাদের শরীরের অনেক উপকারে লাগে। এই জাতীয় গাছের যত্ন নেওয়ার জন্য  আমাদের এগিয়ে আসতে হবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

পেন এন্ড পেপার আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url