বাসক গাছের ঔষধি গুণ সম্পর্কে জেনে নিন
বাসক গাছের ঔষধি গুণ সম্পর্কে জানতে চান?- তাহলে এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনি উপকৃত হবেন আশা করি। সবসময় ওষুধ গ্রহন করা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হয়ে পড়ে।
কিছু কিছু প্রাকিতিক উপায় আছে যার সাহায্যে আপনার শরীর সুস্থ করা সম্ভব। তার মধ্যে বাসক গাছ অন্যতম। চলুন তবে বাসক গাছের ঔষধি গুণ সম্পর্কে জেনে নেই,
পেজ সূচিপত্র
- বাসক গাছের ঔষধি গুণ
- সর্দি ও কাশি কমাতে বাসক পাতার ব্যবহার
- উকুনের উপদ্রব থেকে রক্ষা পেতে বাসক পাতার ব্যবহার
- যক্ষ্মা রোগ কমাতে বাসক পাতার ব্যবহার
- বাতের ব্যথায় বাসক পাতার ব্যবহার
- রক্ত পরিষ্কার করতে বাসক পাতার ব্যবহার
- জ্বর হলে বাসক পাতার ব্যবহার
- মাংসপেশিতে টান ধরলে বাসক পাতার ব্যবহার
- জন্ডিস সারাতে বাসক পাতার ফুলের ব্যবহার
- বাসক পাতার অপকারিতা
- আমাদের শেষ কথা
বাসক গাছের ঔষধি গুণ
বাসক গাছ হচ্ছে একটি ভেষজ উদ্ভিদ ।যার শুধুমাত্র পাতায় নয় এর মূল কাণ্ড পাতা ফুল ও ফল সহ আরো নানা অংশের দ্বারা ভেষজ ঔষধ তৈরিতে কাজে লাগানো হয়। যারা বহুদিন যাবত কফ সর্দি বা ঠান্ডা জনিত সমস্যায় ভুগে থাকেন তাদের এই বাসক পাতা দিয়ে ওষুধ সেবনের মাধ্যমে সমস্যা দূর হয়ে থাকে। আমাদের দেশে বিভিন্ন স্থানে বাসক গাছ বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ হয়ে থাকে। আমাদের দেশের ঔষধ কোম্পানিগুলো এই পাতা ক্রয় করে তাদের কেমিক্যাল ফ্যাক্টরিতে বিভিন্ন ঔষধ তৈরিতে এই গাছ ব্যবহার করে থাকে।
এতে করে বোঝা যায় বাসক গাছের উপকারিতার কথা। পানিতে জীবাণুমুক্ত করতে এই গাছ সচরাচর ব্যবহৃত হয়ে থাকে। তাছাড়া হাত-পা ফুলে গেলে অথবা চামড়ার রঙ পরিষ্কার ও উজ্জ্বল করতে এই গাছের উপকারিতা সর্বাধিকভাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। বাসক একটি ঔষধি গাছ যা এই উপমহাদেশের মধ্যে অনেকদিন যাবত ভেষজ উদ্ভিদ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তবে একেক দেশে এই উদ্ভিদকে বিভিন্ন নামে ডাকা হয়ে থাকে।
এই গাছগুলি সমতলভূমি ও আর্দ্র আবহায় বেশি জন্মে থাকে। বিভিন্ন লোকালয়ে এই জাতীয় উদ্ভিদ পরিলক্ষিত হয়। গাছটি লম্বাই ৪ ফুট থেকে ৫ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। ছোটকালে গাছগুলির গোড়া সবুজ হলেও পরিণত বয়সে হালকা খয়রি রঙের আকার ধারণ করে। পাতাগুলো ৮ থেকে ১২ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। এবং এর ফুল সাদা রঙের হয়ে থাকে।এ ফুল থেকে ফল ও উৎপন্ন হয়ে থাকে। তবে ফলগুলো সুপারি ফলের মত দেখায়।
ফলের বীজের মধ্যে ছোট ছোট অসংখ্য বীজে ভরা থাকে। এই পাতাই ভেসিসইন নামক এক প্রাকৃতিক উপাদান রয়েছে যার দ্বারা কফ সর্দি কাশি সহ ঠান্ডা জনিত বিভিন্ন সমস্যার সমাধান হয়ে থাকে। আদিকাল থেকে এ পাতার রস হারবাল ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বাসক পাতা সাধারণ স্বাদে তেতো হয়ে থাকে। সচরাচর যাদের শ্বাসকষ্ট বা ব্রংকাইটিস সমস্যা থাকে তারা নিয়ম করে বাসক পাতার রস খেলে আরোগ্য লাভ করতে পারেন।
সর্দি ও কাশি কমাতে বাসক পাতার ব্যবহার
এই পাতা উঠিয়ে ভালো করে ধুয়ে পাটায় পিশে রস করে নিতে হবে। এরপর এক থেকে দুই চা চামচ রসের সঙ্গে সমপরিমাণ মধু মিশিয়ে দিনে ও রাত্রিতে বাচ্চাদেরকে খাওয়ালে ঠান্ডা লাগা এবং সর্দি কাশির সহ ঠান্ডা জনিত সমস্ত বিষয় থেকে উপকার পাওয়া যায়।
উকুন থেকে রক্ষা পেতে বাসক পাতার ব্যবহার
যাদের মাথায় সারা বছর উকুন হয়ে থাকে তাদেরকে বাসক পাতা তুলে পিষে তার রস মাথায় লাগিয়ে গোসলের আগে ৩০ মিনিট বসে থাকুন। অতপর ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করে ফেলুন।এ ভাবে সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন করলে মাথার উকুন নষ্ট হয়ে যায়। আবার যাদের গায়ে ফোঁড়া ও ব্রণ হয়ে থাকে তাদের এই পাতা থ্যাতা করে তার রস শরীরে লাগিয়ে দেয়ার পর পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেললে অনেক উপকার হয়ে থাকে।
যক্ষা রোগ কমাতে বাসক পাতার ব্যবহার
বাসক পাতায় এন্টিমাইক্রোবাল যা যক্ষা রোগ সারাতে ভীষণ ভবে কার্যকরী ।এছাড়া হুপিংকাশি ব্রোনকাইটিস জাতীয় কাশি সারাতেও বাসক পাতা ভেষজ উদ্ভিদ হিসেবে ভীষণ কার্যকরী।এ পাতার রস ব্যবহার করে এ রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।,
বাতের ব্যথায় বাসক পাতার ব্যবহার
বাতের ব্যাথা থেকে উপশমের জন্য বাসক পাতার অনেকগুলো গুণ রয়েছে এই পাতাটি আন্টি ইনফ্লেমেট উপাদান রয়েছে বাতের ব্যথা দিতে গিতে ব্যথা এজাতীয় ব্যথা বা সমস্যা দূর করতে এই পাতা ব্যবহার করা হয় তাছাড়া যেখানে ব্যথা হয় সেখানে কাঁচা হলুদ চুন ও বাসক পাতা বেটে লাগিয়ে দিলে গিটের ব্যথা কমে যায়।
রক্ত পরিষ্কার করতে বাসক পাতার ব্যবহার
আমাদের দেশে অনেক যুবক-যুবতীগণের মুখে বিভিন্ন ধরনের ব্রণ দেখা যায় আবার কারো কারো পেটে সমস্যা দেখা দেয় আবার কারো কারো এলার্জির সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে এ সমস্যাগুলো দেখা দেওয়াই যখন রক্তের সমস্যা তৈরি হয় বাসক পাতা নিয়মিত ব্যবহার করলে শরীরের রক্ত পরিষ্কার হয়ে থাকে অপরদিকে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে আবার হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় যার কারণে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
জ্বর হলে বাসক পাতার ব্যবহার
হঠাৎ করে কারো জ্বর আসলে দুই তিনটা বাসক পাতা নিয়ে তা থেকে এক চামচ সমপরিমাণ রস সংগ্রহ করে নিতে পারেন বাসক পাতার রসের সঙ্গে তুলসী পাতার রস মিলিয়ে নিন উক্ত মিশ্রণ রসের সঙ্গে মধু মিশিয়ে সেবন করলে জ্বর কমে যায়। সঙ্গে যদি শ্বাসকষ্ট অথবা কাশি থাকে তা থেকে পরিত্রাণও পেতে পারেন অপরদিকে ঠান্ডা জনিত সমস্যা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।।
মাংসপেশীতে টান ধরলে বাসক পাতার ব্যবহার
অনেক সময় ব্যায়াম করতে অথবা খেলাধুলা করতে গিয়ে কোন পেসিতে বা রগে টান ধরলে বাসক পাতা মহা ঔষধ হিসেবে কাজ করে থাকে বাসক পাতা বেটে তাতে একটু চুন ও কাঁচা হলুদ নিয়ে ওই মাংসপেশিতে লাগিয়ে দিলে তাতে উপশম পাওয়া যায়।
জন্ডিস ছাড়াতে বাসক ফুলের ব্যবহার
জন্ডিস থেকে সুস্থ হওয়ার জন্য বাসক ফুলের রসের সঙ্গে এক চা চামচ সমপরিমাণ রস এবং সমপরিমাণ মধু মিশিয়ে প্রতিদিন খালি পেটে খেলে জন্ডিস থেকে রক্ষা পাওয়া যায় সেই সঙ্গে লিভার শক্ত ও মজবুত হতে থাকে তাছাড়া প্রস্রাবের জ্বালা মৃগী রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যায় অপরদিকে চর্মরোগ থেকেও রক্ষা পাওয়া যায় সেই দুর্গন্ধ থেকে বাসক পাতার রস গায়ে মেখে গোসল করলে দুর্গন্ধ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
বাসক পাতার অপকারিতা
বাসক গাছের পাতা ও বাসক গাছের ফুল দিয়ে যেমন বিভিন্ন উপকার হয়ে থাকে তেমনি এ গাছের পাতার রস বেশি পরিমাণ সেবন করলে তার অপকারীয়তা লক্ষ্য করা যায়। যেমন বাসক পাতার রস রোগই বেশি বেশি খেলে বমি বমি ভাব হতে থাকে অপরদিকে গর্ভবতী মা যদি বেশি পরিমাণ রস সেবন করে থাকে তবে মা ও গর্ভের শিশুরও ক্ষতি হতে পারে আবার কারো কারো পেটের সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
আমাদের শেষ কথা
বাসক পাতা ও বাসক গাছের ফল আমাদের উপমহাদেশে ঔষধি বৃক্ষ হিসেবে প্রাগৈতিহাসিক যুগ হতে অদ্যবধি হারবাল চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে বর্তমানে এই বাসক গাছের বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু হয়েছে সাধারণত ঔষধি বৃক্ষ হিসেবে আয়ুর্বেদি ও ঔষধ কাশির সিরাপ বাজারে বিস্তার লাভ করেছে যেখানে আমাদের দেশে বাচ্চাদের ঠান্ডা জনিত সমস্যা জাতীয় বা শ্বাসকষ্ট হলে তাদের প্রত্যয়নপত্রে এ বাসক জাতীয় ওষুধের নাম লিখে থাকেন।
আরো পড়ুনঃ মাসে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা আয়ের উপায়
পেন এন্ড পেপার আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url