ডায়াবেটিস কমানোর ঘরোয়া উপায়
ডায়াবেটিস কমানোর ঘরোয়া উপায় কি? এ ধরনের প্রশ্ন অনেকেই করে থাকে। ডায়াবেটিস পুরোপুরি নিরাময় করা সম্ভব নয়। তবে রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবন যাপন করা যায়।
আমরা প্রায় সকলেই জানি যে ঘরোয়া উপায়ে ডায়াবেটিস নির্মূল না করা গেলেও নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। তাই চলুন ঘরোয়া উপায়ে কিভাবে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করবো তা জেনে নেই,
পেজ সূচিপত্রঃ
- ডায়াবেটিস কী
- ডায়াবেটিস কমানোতে খাদ্যাভাসে নিয়ন্ত্রণ রাখুন
- ডায়াবেটিস কমানোতে নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম করুন
- ডায়াবেটিস কমানোতে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে করলা খান
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আদার ব্যবহার
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে দারচিনি ব্যবহার
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে এলোভেরা ব্যবহার
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আমলকির ও জামের ব্যবহার
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আম পাতার ব্যবহার
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে পেয়ারার পাতা
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে মেথির ব্যবহার
- ডাইবেটিস নিয়ন্ত্রণে কালোজিরা ব্যবহার
- আমাদের শেষ কথা
ডায়াবেটিস কী
ডায়াবেটিস এক ধরনের মেটাবলিক ডিসঅর্ডার, যাকে বাংলায় বলা হয় বহুমূত্র রোগ। এটি একটি দীর্ঘমেয়াদী রোগ যার ফলে শরীর নিজে থেকে ইনসুলিনের উৎপাদন করতে পারে না এবং রক্তের গ্লুকোজে মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হয়ে থাকে। এ রোগটি নির্মূল করা যায় না তবে সঠিক চিকিৎসায় নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
ডায়াবেটিস মূলত দুই ধরনের হয়ে থাকে,
১. টাইপ-১
২. টাইপ-২
টাইপ-১ ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীদের শরীরের সকল ইনসুলিন নষ্ট হয়ে যায়। এসব রোগীকে যদি আলাদা করে ইনসুলিন প্রয়োগ না করা হয় তাহলে তারা মারাও যেতে পারে। অন্যদিকে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের শরীরে ইনসুলিন আছে কিন্তু সেগুলো কাজ করে না। তখন তারা যে খাবারটা খায় সেটা গ্লুকস হিসেবে শরীরে জমা পড়ে যায়। শরীর যখন রক্তের গ্লুকোজ ভাঙতে ব্যর্থ হয় তখনই ডায়াবেটিস হয়।
আর শরীরে যদি গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যাই তবে বিভিন্ন জটিলতার সম্মুখীন হতে হয় যেমন হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক ইত্যাদি হতে পারে। এমনকি মানুষ অন্ধ হয়ে যেতে পারে আবার কিডনি বিকল হয়ে যেতে পারে। তাই যদি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন তাহলে সেটাকে নিয়ন্ত্রণে রাখা উচিত। ডায়াবেটিসের মাত্রা: সাধারণত খালিপেটে রক্তের সুগারের মাত্রা ৫.৫ পয়েন্টের(mmol/l) আশেপাশে বা নিচে থাকে তাহলে ভালো। মাত্রা যদি 5.5 থেকে 6.9 পয়েন্টের মধ্যে থাকে তাহলে প্রিডায়াবেটিস হিসেবে গণ্য করা হয়। আর যদি ৭ পয়েন্ট এর উপরে চলে যায় তবে তাহলে সেটা কি আমরা ডায়াবেটিস বলে থাকি।
ডায়াবেটিস কমানোতে খাদ্যাভাসে নিয়ন্ত্রণ রাখুন
ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীদের খাদ্যাভাসের নিয়ন্ত্রণ রাখা উচিত। কোন প্রকার চর্বি জাতীয় খাবার, কোমল পানীয়, চিনি যুক্ত খাবার পরিহার করায় উত্তম। কার্বোহাইড্রেট যতটা পারা যায় এড়িয়ে চলতে হবে। চিনি খাওয়ার অভ্যাস থাকলে চিনিমুক্ত লাল চা খেতে হবে। তবে আজ যুক্ত খাবার যেমন বেগুন, শাক, সীম ইত্যাদি এ জাতীয় খাবারের উপর গুরুত্ব দিতে হবে।
আরো পড়ুনঃ বাসক গাছের ঔষধি গুণ সম্পর্কে জেনে নিন
ডায়াবেটিস কমানোতে নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম করুন
নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম করা ডায়াবেটিস রোগীদের একান্ত প্রয়োজন। তাতে করে শরীরের বেশি গুলো সুঠাম হতে সাহায্য করে। মানসিক চাপও একটি সমস্যা এই কারণে যোগ ব্যায়াম করা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য আবশ্যক। নিয়মিত রাতে সঠিক সময় ঘুমাতে যাওয়া ও নিয়মিত ভরে উঠে খালি হাতে সাধারণ শারীরিক ব্যায়ামও ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য একটি ভালো অভ্যাস।
ডায়াবেটিস কমানোতে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন
সর্বদা ওজন নিয়ন্ত্রণের দিকে মনোযোগ দিতে হবে। আপনার উচ্চতার দিকে বিবেচনা করে আপনার ওজন ঠিক রাখতে হবে। যদি সম্ভব হয় তবে পুকুরে ৩০ মিনিট সাঁতার কাটুন অথবা সাইকেলিং করার অভ্যাস থাকলে ৪৫ মিনিট সাইকেলিং করুন। দেখবেন আপনার শরীরে ওজনের সাথে আপনার ডায়াবেটিসের মাত্রা ও নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে করলা খান
প্রতিনিয়ত করলে খেলে বিভিন্ন ধরনের রোগ থেকে নিরাময় পাওয়া যায় তার মধ্যে ডায়াবেটিস অন্যতম।করলা ইনসুলিনের নিঃসরণ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এটি রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমাতে পারে।প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় করলা রাখুন অথবা করলার বীজগুলি ফেলে দিয়ে সেটি থেকে রস বের করে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে পানির সাথে মিশিয়ে পান করুন।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আদার ব্যবহার
ডায়াবেটিস রোগীদের সুস্থ থাকতে ভরসা আরেক নাম হতে পারে আদা। আদাতে বহুমুখী অনেক গুণ রয়েছে। আদা শর্করা মাত্রা কমাতে এবং ইনসুলিনের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। তাই রান্নায় আদা খাওয়ার পাশাপাশি ডায়াবেটিস রোগীদের যদি চা খাওয়ার অভ্যাস থাকে তাহলে আদা চা খেতে পারেন। ভালো উপকার মিলবে।
আরো পড়ুনঃ নিম গাছের বহুবিধ ঔষধি গুন - নিম গাছের উপকারিতা
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে দারচিনি ব্যবহার
দারুচিনি টাইপ ২ ডায়াবেটিস আছে তাদের জন্য খুবই উপকারী। দারুচিনি অগ্নাশয় ইনসুলিন হরমোনের ক্ষরণ বৃদ্ধি করে থাকে এবং এই হরমোন রক্তে শর্করা মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে রাখে যা রক্ত সুগার লেভেল কমায়। তাই আপনার খাদ্য তালিকায় দারুচিনি রাখুন। এই দারুচিনি আপনি চায়ের সাথে অথবা দারুচিনি গুড়ো করে পানি সাথে মিশে পান করতে পারেন।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে এলোভেরা ব্যবহার
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আমলকির ও জামের ব্যবহার
আমরা জানি আমলকিতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা শরীরে শর্করার মাত্রা কমানোতে সাহায্য করে। আবার ডায়াবেটিস রোগী হলে সব ধরনের ফল খাওয়া যায় না সেটাই আমরা জানি। তবে তারা জাম কোন সন্দেহ ছাড়াই খেতে পারবে। তাই ওষুধ খাওয়ার পাশাপাশি আপনারা শর্করার মাত্রা কমাতে আমলকি ও জাম খেতে পারেন।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আম পাতার ব্যবহার
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আম পাতা একটি খুবই উপকারী ঘরোয়া চিকিৎসা। আমের ৩-৪টা পাতা খুব ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে। তারপর একটি সসপ্যানে আমের পাতা এবং নিমপাতা কিছুটা পানির মধ্যে সিদ্ধ করে সে পানি প্রতিদিন সকালে খালি পেটে পান করতে হবে। প্রতিদিন সকালে হাফ কাপের মতো এই পানি পান করুন দেখবেন ডায়াবেটিসে মাত্রা কমে এসেছে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে পেয়ারার পাতা
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে মেথির ব্যবহার
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সবচেয়ে ভালো প্রতিকার হলো মেথি। রাতের বেলা ২ চামচ মেথির বীজ একটি গ্লাসের ভিজিয়ে রাখুন। তারপর সকালে সে পানিটি পান করুন। এমনকি আপনি মেথিগুলো পিষে বড়া তৈরি করতে পারেন।আর প্রতিদিন সকালবেলা বড়া একটি করে পানির সাথে খেয়ে নিতে পারেন। এমনকি মেথির বীজ 'প্রিডায়াবেটিস' হওয়া থেকেও দূরে রাখতে পারে।
ডাইবেটিস নিয়ন্ত্রণে কালোজিরা ব্যবহার
কালোজিরা, মেথি, চিয়া বীজ পিষে বা ব্লেন্ডারে দিয়ে পিষে নিতে হবে। তারপর সে গুড়াটি এটি কৌটাতে সংরক্ষণ করে প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে এক চা চামচ করে অল্প কিছু পানির সাথে মিশিয়ে পান করতে হবে। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের জন্য কালোজিরা মেথি চিয়া বীজ অনেক উপকারী।
আমাদের শেষ কথা
ডায়াবেটিস কে নিরব ঘাতক বলা হয় এবং এটি বর্তমানে আমাদের দেশে এইটা জাতীয় সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। উপরের লিখিত ঘরোয়া উপায় গুলো মেনে চলে আমি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সফল হয়েছি এবং আশা করি এই তথ্যগুলো আপনাদের উপকারে আসবে। তবে মনে রাখবেন ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে চিকিৎসা ও ওষুধের বিকল্প কিছু নেই।
পেন এন্ড পেপার আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url